আমরা কেউ নিদ্রাতুর নই - দিশারী মুখোপাধ্যায় /আংশিক


রাত্রি ১



বল্কলে রেখেছ তুমি নারী ও নক্ষত্র 
মোমের ভেতর বাতি নিভে অন্ধকার 

আর কিছু পোশাকের গাথা 
লাউড পিস্তল
শ্যাওলা সরালে কিছু জলের আকাশ 

বল্কল ছাড়ালে তেমনি উচ্চারণ জাগে 

যাকিছু লেখার জন্য জন্মের ভূমিকা 
সেসব লক্ষণরেখা আজও মান্য ক'রে 
রাত্রির যোনিতে কিছু রাত্রি ছুপে থাকে 


#

রাত্রি২



অহো, তুই রাত্রি যদি তবে তোকে লেখ 
উল্লেখ রাখিস যেন তিলেক অজ্ঞতা
জ্ঞানের যা গহনা স্বরূপ 

বিস্তীর্ণ বিকাশপর্ব সংক্ষিপ্ত হয় 
সেই হওয়া তাকে বিস্তর অনটনে 

অনটন, যদি তুই অভাবে থাকিস 
রাখিস স্মরণে একটু বিস্মরণকে  আর 
লিখিত হবার বিবরণ 

রাত্রি, তুই লেখার আজ পত্রমিতালী 
তাহাকে তাহার কথা শোনা 

#


হওয়ার কেমিস্ট্রি 




জেনেছি জেনেছি শ্যামা 
রত্ন কাহাকে হওয়া বলে 

হওয়ার কেমিস্ট্রি তুই নিজেই রচনা 
আর আমাদের কথা ক্ষমাঘেন্না কর 
মনে কর জলে খুব জল মিশে গেছে 

সেইজন্মে তরলতা বুভুক্ষু শরীরে 
পুচ্ছ তুচ্ছ জ্ঞান করে 
জ্ঞান কাকে করা হওয়া বলে 
বলিব বলিব ক'রে হর্ন ছেড়ে যাওয়া
একাকী স্টেশন 

এইখানে যূপকাষ্ঠে মৃত্যু বাঁচিল 

#

চয়ন 



মাননীয় অনুপ্রাস অঞ্জনে রাঙা 
প্রিয়ংবদা সবুজ তুমি নদীতে 
তীরভূমি,  পদেপদে আকাশ 
আর ছুট-চল স্বপ্নের রীতি
এবং আমাদের ইত্যাদিকে ডাকো
তারপর সুহৃদ বিন্যাস 
বিলুপ্তিকে সাদর বর্জন 
এবং তোমাদের ক্রমশকে বলো 
বলার দুর্মূল্য চয়ন 

#

হে ঘুম 




হে ঘুম, ক্রমশ প্রবল প্রতাপশালী 
কী উদ্দেশ্যে ঘোরাফেরা এ অঞ্চলে 

ঘন শ্যাওলার সরে ঢেকে রাখছ জল 
আর সূর্যের সব আলো হেলাফেলায় 
নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাটে 

হে ঘুম,  কী উদ্দেশ্যে তাঁবু ফেলছ 
আমরা কেউ নিদ্রাতুর নই 


#

সন্ধান নিজেকে খোঁজে



রাস্তাকে বগলে রেখে সন্ধান সম্ভব নয় 

সন্ধান নিজেকে খোঁজে   আর 
রাস্তারা ভূমিষ্ঠ হওয়ার জন্য 
সম্ভাবনার ভোল্টেজ বাড়ায় 

কয়েক পৃষ্ঠা নিশ্চুপকে বাঁ পাশে সরালে 
ধোঁঁয়ার রহস্য-রিং-এ  তুমি সিগারেট 
এইবার বাগান নস্যাত 

ছাপ্পা নামে আগাছারা আর নত নয় 
সকলেই গাছ আর গাছেরাও মনুষ্যবিশেষ 


#


মায়া 



ধরার সময়ে খুব বৈরাগ্য বাড়ে 
ছাড়ার সময়ে বাড়ে টান 

সেমত রাধার কেশ বাতাস চুমিল
আহারে চুম্বন ! তুমি নরজন্মে আমি হতে যদি 

ধারাস্রোতে অবিকল কলকল মেঘ 
তাহাতে আবেগ কিছু সঞ্চিত হলে 
আঁচলের গিঁটে কিছু স্মৃতি রয়ে যেত 

মৃত্যু এলে আয়োজন অন্নপ্রাশনের 
নিষিক্ত হবার কালে আবেদনে ছুটি 


#


বিবর 



সাফল্য ডুবে গেছে একগলা জলে 
নিষ্ফলা হয় যুদ্ধজয় 
সময়ের মূক অভিমানে 
আঘ্রাণে আঘ্রাণে কিছু প্রাপ্তি ঘটে শুধু 

আকাশ বিবরে কোনো পরাজিত সত্যের তীব্রতা 
কোথাও কীভাবে যেন মৌন উচ্চারণে 
উচ্চকিত 



#

আকাশের আঁচল 



ভাঙন শিখবে বলে টুকরো টুকরো চোখ 
দেখছে যাদের আঙন জুড়ে 
তারা জারণে দেখাল চোখে যন্ত্রণা, যাহা 
বাংলা বানানে হয় কালাচাঁদ 
রঙ সে যেমনই হোক 
শুধুমাত্র ঢঙটুকু বিচার্য বিষয় 

ঠিক তখন এক-আঁচল আকাশের সমস্তটা জুড়ে 
পুড়ে পুড়ে জন্ম নিল আগুনের উদ্ভিন্ন জনম 

আঙন একাকী থেকে না-থাকাকে বলে -
যাহা বলে তাহা  রাইবিনোদিনী



#

আঙুর ফল 



আমি তাকে চিনিনা 
তার একটি ডালে ঝুলছিল একটি ফল 
পাশের ডালে সেই ফলটির নিজস্ব ধারণা :
নিশ্চয়ই সুস্বাদু খুব 

এগাছ ওগাছ ,এডাল ওডাল আমি 
ফল ঠোকরাই 
স্বাদ কহতব্য নয় 
ফলের ফলে ডানাপালক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পা উল্টে 
গাছের নিচে চিত আসনে আসি 

আপনিই প্রথমে থানায় গিয়ে খবর 
লাশ সরানো হোক 

অন্য ডালে অন্য একটি ফল 
চোখ মেরেছে আপনাকে আর আপনাকে আর আপনাকে 



#

নিষিদ্ধ ফল 



শুরুকে জীবন দাও ফের 
বলো কংসাবতী যত বানান শিখেছ 
এবং গানের যত অনুগত সুর    আর 
সুরের চারদিকে যত বিনম্র আগুন 

ধ্বনির ওঙ্কার জাগে রাতে 
অন্ধকার সেজে ওঠে আলোর বিচিত্র অনুরাগে 
এ সময়ে সমুদ্রের তীরে তীরে তীরে 
নগর পত্তর হতে পারে 

চোখের বারান্দা থেকে
স্বপ্নের বিশ্বাস 
আবার নিষিদ্ধফল ভক্ষণ করুক 


#

ডায়ালটোনের তুমি



একটু আগে একপশলা  
এখন আকাশ ভরা মুচকি মুচকি 

মণিশঙ্করের রেনকোট দুয়ারে ঝুলছিল 
তার নিচে আলপনা জলকে শেখাচ্ছিল আলপনা 
নিমকি নিমকি চিন্তারা জমেছিল প্রুফে 
তখন অঝোর হলে রুমাল কোথায় 

অনেকক্ষণ একাএকা আছি 
দুএকটান দাও 
কথা দিচ্ছি হৃদয়কে বিব্রত না করে 
ডায়ালটোনের-তুমি আকণ্ঠ নিয়ে আলপথ 

সবুজকে সবুজ চেনাচ্ছে সবুজ রঙ 


#


রহস্য ফিদা



কে কাকে কোথায় কেন কখন 

বিস্তর কথার জন্য 
কয়েক পশলা হাসি 
হাসি তো প্রণয়পানে ফিদা 
খামোশি তো হ'ল বহুকাল 
এবার ছলাৎছল হোক 

কখন কোথায় কে কেন তোমার 
-এই ভাব শিমুল হয়েছে 

পৃথিবীকে গ্রাসে যারা পরিণত করে 
তাহাদের তরে 
বলে রাখা ভালো 
বিশ্ব ক্রমে মহাবিশ্ব, মহা মহাতর   আর 
তুমি খুব বিন্দুবতী বিলোলপ্রভাব
আমি তার দাসানুদাসের অনুচর 

কোথায় কখন কেন কে কাহার হার 
হাড়ে হাড়ে টের পেতে এজন্ম আমার

#


পাপ 



পাশে এসে বসে থাকে পাপ 
যেন পোষ্য , অনুগত 
দৃষ্টি থেকে রশ্মিরেখা পেতে দেয় 
আমার পায়ের সামনে 
রাস্তা ভাবতে বাধ্য হই তাকে 

অস্থি মাস রক্তরস খাওয়া শেষ হলে 
পোষ্যটি 
আয়তনে ও বিক্রমে বাড়ে 
তখন সে পশুরাজ 

রাস্তা এক খাদের কিনারে গিয়ে 
অসম্পূর্ণ থাকে     আর আমি 
খাদের অতলে পড়ে শূন্য হয়ে যাই 
শূন্য হয়ে শূন্যের ভেতরে 
পাক খেতে খেতে টের পাই 
পোষ্যটি কর্তৃবাচ্য ছিল


#


প্রথম আলো 



আপনি সেদিন খুব সকালে এদিকপানে প্রথমআলো 
আমরা তখন ঘাসের আগায় বিন্দু বিন্দু 
সূর্য প্রথম মুখ দেখছে ঘুমঘুম ভাব 

জলের নিচে ঝিনুক ছিল মেঘমল্লার
রাত্রি এবং সকাল এবং দুপুর এবং সঙ্গে যাদের থাকার কথা 
ছিল তারাও বেশ উসখুস বেশ খরগোশ
বেহালা বেশ তরতরতর উপুড় আকাশ 

পশ্চিমে মেঘ যখন গভীর কেশবিন্যাস 
ছপছপছপ নগ্ন পায়ে চু-কিৎ-কিৎ 
হাড়ের ভেতর শীতশীতভাব জমতে যাবে ঠিক তখনই 
আপনি এলেন এদিকপানে সকাল হয়ে 
সকাল কেমন সেই পত্থম আমার দুচোখ 
আর তখনই হাজির হ'ল ঋতুর প্রলেপ 
পুকুরপাড়ে  আমবাগানে খোলামাঠের গোপনবুকে



#


পিঁপড়ের প্রেম 



সকালবেলা উঠেই একটি খুন করেছি 
লালপিঁপড়ে 
দাঁত মেজেছি মুখ ধুয়েছি চা খেয়েছি 
পেপার ধরে লালগড় আর মঙ্গলকোট
উলুবেড়িয়ায় ঘুরে এসেছি 
তারপর স্নান ভাতের থালা চর্ব্যচোষ্য লেহ্যপেয়
অফিস বাসে পৌঁছে গেছি শুধুকেরানি 
  
সারাদিনের পরে সূর্য পশ্চিমে যায় 
তখন ফেরার পথ ধরেছি 
পথের সঙ্গে গান করেছি 
বৃষ্টির জল পান করেছি 
তখনই আনচান করেছি 
আহা পিঁপড়ে তার জন্য 

সকালের সেই খুনিকে এই বিকেলবেলায় এই এখুনি 
খুন করবার প্ল্যান করেছি 


#


নিজেই বেড়াল হই 



কোনো কথা ভাবার সময় যদি 
টিকটিকি করে টিক টিক টিক 
সে ভাবনা সত্যি হয় 
এরকম প্রবচন আছে 

আহা টিকটিকি, তুমি বেঁচে থাকো 
টিক টিক কর অনর্গল 
যখন যেখানে আমি থাকি আর ভাবি 
যা ভাবি তা উহ্যই থাক 
সমভাবনার লোকে ঠিক বুঝে নেবে  
না বুঝলেও ক্ষতিবৃদ্ধি নেই 

কোনো রাস্তা ধরবার আগে যদি বেড়ালে অতিক্রম করে 
সে রাস্তা অশুভ হয় 
এরকম প্রবচন আছে 
বেড়ালবিহীন যাত্রা নিতান্তই প্রবন্ধের বিষয়, তাই
নিজেই বেড়াল হয়ে রাস্তা কাটি 
আর থাবা চাটি


#


সময়ের অশ্রুবিন্দু 



বিশ্বাসের গা বেয়ে চুঁয়ে পড়ল একবিন্দু জল 
আমরা যাকে অশ্রু বলে থাকি 

গড়ানো সময় শুধু গড়াতেই থাকে 
কারো সঙ্গে ঘষাঘষি নেই তার 
কেউ তাকে বাধা দেয় না 

অশ্রুবিন্দুটির কথা 
সময়ের কোন পাতায় গেলে ফিরে  পাওয়া যাবে 
কারো জানা নেই 


#



বাঁশির অর্থ 



অপেক্ষাকে রিলে রেস করাবে আর কত 
এইবার বাঁশি বাজাও রেফারি

তুমি  গ্যালারি হও , অথবা দৌড়ের ঘোড়া 
আমি কোজাগরি

তুমি জানো আমি কত সমুদ্রের 
একমাত্র লকার 
আমি তো তোমাকে ছাড়া অসীমকে ঠিকানা দেবো না 
অনন্তও তোমাকে ছাড়া পাসপোর্ট পাবে না

বাঁশি বাজাও রেফারি , নাহলে  বাঁশিই 
তোমাকে বাজিয়ে একশেষ

#


কবি ফিরে আসবেন 



কবি হেরে যাবার পর একটা উৎসব হলো 
তাতে যারা অংশ নিয়েছিল সকলেই চেনেন তাদের 

কবির নির্বাসনের পর তারা ফের 
উৎসবে ও আয়োজনে মাতোয়ারা ছিল 

কবির অসুখ হলে সেইসব অসুস্থ জনেরা 
হুল্লোড়ে, কোলাহলে, আতশবাজিতে 

কবি বেশ কিছুদিন কোমায় আচ্ছন্ন 
তিনি ফিরে আসবেন সকলের জন্য স্লোগান নিয়ে 


#

অলীক ঘুম 



এখন যতটা ভালো দক্ষিণের হাওয়া
তুমি তার গহনের স্মৃতি 

অথবা অলীক ঘুমে স্পর্শের লবণের স্বাদ 
অগাধ প্রীতির ভাষা কম্পোজ ক'রে 
জেগে উঠছ তুমি খুব 
সাগরের সর্বাঙ্গ জুড়ে 

অথচ প্রচ্ছন্ন ভারে জেগে ওঠা দায় বাহকেরা
আমার অপৌরুষেয় নির্বিকার মতি
ভান বলে গণ্য করে 

ইহাতে কাহারো কিছু বলিবার নাই,তাই
আরো বেশি , আরো স্পষ্ট দেখতে চাই বলে 
চোখ বন্ধ করে পথকে বলি স্বাগতম



#


স্বপ্নের খোঁজে 



একটি রাতের কথা ভাবুন 
যেদিন আপনি একটি পোড়ো বাড়িতে ছিলেন একা
প্রাকৃতিক এবং ব্যক্তিগত কোনো দুর্যোগ 
তখন আপনার চতুর্দিকে 

আপনি আমার খুব পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও 
আমি কোনোদিনই আপনার পরিচিত ছিলাম না
তবু সেদিনের সেই রাত্রির হাঙর-আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য 
আপনি আমার হাত ধরে রাস্তায় উঠেছিলেন 
সেই রাস্তা ক্রমে ক্রমে আজ এই ঠিকানায় 

এমন একটি রাতের কথা ভাবুন আবার
এই রাস্তা হয়তো গিয়ে পৌঁছাবে এক গিরিখাতের মুখে 
পেছনের রাস্তা সব মুছে যাবে বিস্মৃতির ইরেজারে
তখন আবার যেন আমি অনিবার্য থাকি 
আপনার এই দাসানুদাস

একটি স্বপ্নের খোঁজে দুঃস্বপ্নদের মেনে নিই 


#

হঠাত্‍ শুনি 



শুনি হঠাত্‍ জলে আগুন মেতেছে 
সংসার খুব খরস্রোতা মৌন 
টুপি খোলার তীব্র বিনয় ফুটলে
অশোকফুলে কবিতা পাঠ ঋদ্ধ 

আমার মন সকলই ভেল ব্যর্থ 
আকাশ ছিল রুবাই আমার কণ্ঠে 
পথের দিকে তাকিয়ে থাকার কাব্য 
এখন বড় একা একাই মগ্ন 

গুনে গুনে কেটেছে ফাল্গুন 
মাথায় এখন টাকের শোভা পূর্ণ 


#


ডিএনএ একটি বীণা 



মুছে যাচ্ছে বর্তমান 
পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা অসহায় গাছ 
ঝরা পাতার নিচে একটা প্রাচীন মুদ্রা 
বীণাবাদন রত সমুদ্র গুপ্ত 
আমার ডিএনএ-ও একটি বীণা

গার্হস্থ্য পরিব্রাজক তুমি
বর্তমান শুয়ে আছে মেডিকেল ওয়ার্ডে
আর দূরে একটি পাখির গান 
গাছেদের মনে করাতে ফসল ফলানোর কথা 
চতুর্দিকে জ্বলে উঠছে তানসেন 
তানসেনের স্নায়ুতন্ত্রে রিচার্জ

সময় আর একবার উঠে বসবে 
সকাল ছ'টায়

Popular posts from this blog

অপেক্ষা একটি অসমাপিকা ক্রিয়া

স্বর ব্যঞ্জনের কথোপকথন

পাপের গুনাহ দেখি না