বিশেষ্য বিশেষণ আত্মকথন
- Get link
- X
- Other Apps
১)
ফুটিয়ে ফুটিয়ে দুধ গাঢ় করে বসে থাকে মেয়ে।এককালে
যত খিদে ছিল আমার, লোকে যাকে অভর, রাক্ষুসে, পাশব
বলে গালাগাল দিত। এখন ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত আকাশ জুড়ে।
এখন মেয়েটি আকাশ বিষয়ে কিছু লিখতে পারে।ভাবের
সম্প্রসারণ করে দেখাতে পারে।অথচ সম্প্রসারিত ডেজিগনেশনহীন
এক বিস্তার ,ভাবনার শরীরে কোনো মায়াবী বা সস্তার
পোশাক দিচ্ছে না।
পোশাকের রঙ, মাপ, স্বচ্ছতা ও দাম নিয়ে বিভিন্ন ভাষার জ্ঞানকোষে
জ্ঞান প্রায় তলানিতে।একসঙ্গে একাধিক সম্পর্কের আবেদন আমি
পাঠিয়েছি মেয়েটির কাছে। অপৌরুষেয় আকারের খোঁজে
সার্চ-অপশনে ক্লিক করেছি আজই।
২)
একটা অহর্নিশ তার মালিককে পেতে চায়।বলতে চায়
তাকে আরও ভরিয়ে দিতে।একটা ছোট্ট গাঁদাগাছ যে রকম
অনেক কুঁড়ি পেতে চায়।এই 'আরও' ও 'অনেককে' কতটা
পরিমাণ বা সংখ্যা দেওয়া যেতে পারে তা কি মালিক ঠিক
করবেন? মালিককে সর্বময়, একমাত্র, অসীম ক্ষমতার ব্যাটারি
বলা হবে কি? অহর্নিশ সেসব কিছু জানে না। সে কেবল
আকুলের কাছে মতো হতে শিখছে।
মানকচুর জঙ্গলে ঢুকেছে আফিমের কুয়াশা।সে তার আত্মপরিচয়
কীভাবে দেবে জানতে চায়।ছোটো ছোটো কীটপতঙ্গ, খুব ছোটো কয়েকটি
পাখিও তার কারণ বোঝে না।অথচ মানুষের তাড়নায় আফিম খুব
তাড়িত।সে নিজেও কী কখনও বুঝত নেশার ধরণধারণ কেমন!
একটা জলের ফোঁটা গড়িয়ে যাচ্ছে।পেছনে যে দাগটা পড়ছে সেটা
হাল্কা, না সরল, না রঙিন বুঝে ওঠার আগেই হাওয়া।
৩)
উল্লসিত মানুষটি উল্লাস হারিয়ে এখন পড়ে আছে
জনারণ্যের নিভৃতিতে।কীসের যে উল্লাস ছিল তার
মানুষ বোঝেনি। মানুষ কখনও কোনো বোঝা নিতে চায় না।
চতুর্দিকের বাকি চিত্রপট চিত্রকরের ইচ্ছে মতোই আছে
যথাযথ।ছোটো বড় ঘাসের সংসার, যাকে তোমরা বলো
তৃণভূমি, নির্বিকার আছে।সদ্যবিদায়ী বর্ষার ঋণ স্বীকারে
তৎপর।বিভিন্ন সাইজের প্লাস্টিক, হর্ষ ও ধর্ষ মেখে
এখানে ওখানে পড়ে আছে।
উল্লাস হারানো মানুষটির গায়ে এখন কি তবে খানিকটা
বিষাদ দেব? অবসন্ন পায়ের সামনে প্রচুর বিষণ্ণ পাথর।
যদিও জিজ্ঞাসার সুযোগ হয়নি তার পচ্ছন্দের তালিকায়
পাথর কখনও ছিল কিনা।
অদূরে কোথাও আগুন, কেন কে জানে, উল্লসিত খুব।
৪)
তোমাকে চিনি না। চিনতে পারিনি। তোমার বিশেষণকে চিনি।
একটি গাছের পাতা কতদূর বর্ণময় হলে প্রজাপতিদের নিরাপত্তা বাড়ে
অনেকেই জানে। তবু ,জানে না এমন লোকও আমাদের প্রতিবেশী হয়।
তোমার সম্পর্কে কিছু জানি বা না-জানি ,যায় আসে না। অথচ জানতেই হবে
তোমার চুলের সম্পর্কে কিছু কথা।জুড়ে দিতে হবে আগে ও পরে ,ছোটো বড়
নানান সরল ও জটিল বাক্যে। নগরবাসীরা দাবি করে।
সোনালী রঙের এক ঘন বিস্ময়, মুগ্ধতাকে সঙ্গে নিয়েছে খুব প্রকাশ্যে। যদি
এর জন্য কারো কোনো পেন্টিংএর আয়োজনে বিঘ্ন ঘটে তবে
তোমার শরণাপন্ন হবো।
৫)
সমাজে সকলের মতো আমারও কয়েকজন প্রতিবেশী আছে।
সেই প্রতিবেশীরা ভালো না মন্দ, সরল না জটিল, এসব বিষয়
কখনও আলোচিত হয় না আমার উঠোনে।একটা বকুলফুলের গাছ ,
মঞ্চ ছাড়া কয়েকটি তুলসী, অসময়ের করমচা আছে।
জনৈক প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে মোজেইক তুলে ফেলা হয়েছে।
তাদের ভাঙা ভাঙা টুকরোগুলো বাড়ির বাইরে এসে অনাদর
উপভোগ করছে। যে মালিন্য তাদের শরীরে সংক্রমিত হয়েছিল
তারা দ্যুতি দান করছে বাইরের পৃথিবীকে।
আমি এই পৃথিবী সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না।সেও আমার
উচ্চতা, দৃঢ়তা এবং জটিলতা নিয়ে।ভাঙা মোজেইকের সঙ্গে
এখন আমার যা ঘটছে,তাকে ব্যাকরণে সিদ্ধ বলে না। বলে
দুর্গন্ধ ও বীজানু সৃষ্টির আধার।
হে দুর্ভেদ্য, হে ধোঁয়াটে, হে অর্থহীনতা, এসো সঙ্গমের আসনে
দেখা করি পরস্পরে।
৬)
রাত এমন বেইমানি করে প্রায়শই আমার প্রতিযোগীর সঙ্গে ।
সেইযে কল্পফুলের গাছ, রূপ-সৌরভ-নম্রতা যার পায়ের কাছে
স্তূপাকার করে ঢেলে রাখা আছে, তাকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মাথায়
বসিয়ে, টেনে আনে আমার ব্ল্যাকবোর্ডে, সাদা অক্ষর করে।
আমি সেই প্রতিযোগীকে ভালোবাসি। তীব্র, অন্ধ, নিঃস্বার্থ, ক্ষুদ্র -
অনেক রকমের হয় ভালোবাসা।তেমন কিছু কেনার জন্য বাজারে
যাইনি।অনলাইনের কেনাকাটাতেও আমার তীব্র অনীহা।এসব
বরং তার কাছে থাক।না পেলে সে মিছিমিছি হিংসেকে গ্রাহ্য করবে।
কল্পফুলের গাছ আমি রোপণ করতে পারি।নির্বোধ, অন্ধ, মন্থরা রাত
আমাকে লোভাতুর করতে চায়।চুরি করার প্ররোচনা দেয়।
শেখাতে চায় মল্লযুদ্ধ।
একদিন সেই বেইমান-রাতকে ডিনারে আমন্ত্রণ করে প্রিয়
কল্পগাছের আপেল খাওয়াব প্রচুর।
৭)
নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে।বাংলার দিকেই
সে আসবে। পায়ে পায়ে অন্ধ্র, উড়িষ্যা খানিকটা ঘুরে
অবশেষে।নিম্নচাপ কিংবা ঘূর্ণিঝড়, কেউই কিন্তু
বাংলার পূর্ব পশ্চিম বোঝে না।স্বরাষ্ট্র ,পররাষ্ট্র বোঝে না।
পেতে চায় সম্পূর্ণটুকু।
যে বাড়িটি আমি কখনও দেখিনি, হয়তো সেটা এখনও
তৈরিই হয়নি কোথাও, তার বারান্দায় দাঁড়িয়ে যে এখন
আকাশের দিকে উৎকন্ঠায়, তার ভালোবাসা নিয়েও বাণিজ্য
হয় বাজারে।বিক্রিবাট্টাও বেশ ভালোই হয়।এমনকী
সেই বিষণ্ণ মেয়েটিও, চাপমুক্ত হতে, সেই পণ্যই কিনে খায়
আইসক্রিমের মতো।
আইসক্রিমের সঙ্গে শীতলতা থাকে, মিষ্টতা থাকে, সুগন্ধ থাকে
রঙের বাহারও থাকে বেশ জম্পেশ।
৮)
স্পর্শ হবে, এটা ঠিক ছিল আগে থেকেই।আলিঙ্গন হবে,
কথা বিষয়ক দাবা হবে, এও ঠিক ছিল।হয়তো সবই
ঠিক থাকে এরকম আগে থাকতে।কেবল কল্পনা তার
ঠিকানায় গিয়ে বসার জায়গা পায় না।যেখানে থাকার কথা
প্রশান্ত মহাসাগরের, সেখানে হাঁটু-জল বিলও থাকে না।কতটা
দূরত্ব বজায় রেখে রেখে জন্মায় গাছের পাতারা,তা পূর্বনির্ধারিত।
এই প্রাক-নির্ধারণ কী কারণে? যে কারণই হোক, হঠাত্ সে
গাছের ডালে কলম বাঁধার কথা ইতিহাসে উল্লেখ ছিল না।
আপনি আপনার হার্ট-অ্যাটাকের কথা বললেন।সেখানে কী কী
উপায়ে নতুন চলার পথ তৈরি করেছেন ডাক্তাররা, তাও বললেন
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।
বিনয় এবং বিপুল, দুটি বালক।সোনালী ও উজ্জ্বলা, দুটি মেয়ে।
এরা কেউই জানত না, রাস্তায় সেদিন একটা দুর্ঘটনা হবে
তাদের সামনেই।
৯)
মিষ্টতা ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। তা যদি কোনো মেয়ে বা ছেলের
গায়ে লাগত, লাগতেও তো দেখি এখানে সেখানে, পথে ঘাটে
প্রায়দিনই, ছবি আঁকা সহজ হয়ে যেত।এভাবেই এক একটা
ছবির জন্য এক একজন চিত্রকর বিখ্যাত শিল্পী হয়ে ওঠে।
সুগন্ধ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পথিককে ডেকে নিয়ে আসে বকুলগাছের
কাছে। তার নিচেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে সেই সব মালা,
যারা গাঁথা হবে লতার প্রশ্রয়ে।
একটা গভীরতর-ভেসে-থাকা মানুষকে ক্রমশ পথ দেখাচ্ছে।
আর সে পথ গর্ভ দেবে ও ধারণ করবে তার নির্বিকার আশক্তি
দিয়ে।ভিজে আনন্দের এতো উষ্ণতা থাকে, যাকে ঈর্ষা করে
যেকোনো উষ্ণতার ধারক।ধারক তো বুঝতে পারে, ধারণ
করার ক্ষমতা তার কতটা কম।
সব দ্রুততাকে আমরা মানুষের স্থিতির মধ্যে ভরে দেব, যেন
শর্করা কখনও তিক্ততার কারণ না হয়।
১০)
বাড়িটি জানে তার সম্পর্কে বলা হয় প্রাচীন, ভঙ্গুর আর ভৌতিক।
যেসব পাখি ঘুলঘুলিতে বংশানুক্রমিকভাবে ডিম পেড়ে আসছে
এ বাড়ির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ঘুনসির মতো।কাক এবং কোকিল
উভয়েই কালো মেয়েটিকে চেনে। কিন্তু কর্কশ এবং মিঠে ব্যবহারের
সময় ,বাছাবাছি করতে শেখায় বাক্য রচনার ওস্তাদরা।
মেঘলা ও রোদেলা, দুটি দিনের জীবনী পড়ছিল এক মাছরাঙা।
নগর জীবনের অ্যান্টেনায় তাকে মানায় না, সে জানে। তবু
গ্রামের খোঁজে বার হলে, ক্লান্তি তাকে একসময় বিশ্রাম নিতে বলে এখানেই।
সবুজ ও হলুদ, দু রঙের দুটো পাতা, হয়তো একই গাছ থেকে
উড়ে এসেছিল।কেউ ছিঁড়ে, কেউ খসে।তারপর হাওয়া তার
ঘূর্ণির নেশায় ,দুজনকেই একই সম্বোধনে ডাক দিল।সবুজের
ছিল তখনও কিছুটা দেমাক।হলুদের ছিল অক্ষমতা।সাড়া
দিল না কেউই।
১১)
কোন খ্যাতি কার গায়ে এসে লেগে যাবে, অনুমিত হয় না।
ঘটনাটা ঘটে যাবার পর, মানুষটা চিনতে পারে, উজ্জ্বলতা
কাকে বলে। কার পোশাকের জন্য কত মাত্রার ঔজ্জ্বল্য চাই
তা নির্ণয় করে গণিত।গণিতকে যদি মানুষ বলো তো, সে এক চরম
উদাসীন ব্ল্যাকবোর্ড।ভ্রান্তি অভ্রান্তির পরোয়া করে না।দুটোই অঙ্ক।
দর্শন বলে একটা শাস্ত্র বহুকাল ধরে রয়েছে এই পৃথিবীতে।
যে তাকে চেনে, যে চেনে না, দুজনই তার কাছে পরিচিত।এই
শাস্ত্রটির মতো কোমল হাড় অন্য কারো শরীরে দেখা যায় না।
অথচ, খ্যাতি ছুঁয়ে ফেলা মানুষেরা তার কাঠিন্য প্রমাণ করতে
শহিদ হয়ে যেতে চায় সহজে।
প্রথম যেদিন তেঁতুল খেয়েছিল মানুষ, কেমন লেগেছিল? চমকে
উঠেছিল? ভয় পেয়েছিল? ঘুম ছুটে গিয়েছিল রাতের? হয়তো।
অথচ স্বাদের কারণে সে ক্রমেই হয়ে উঠেছিল খুব আকর্ষণীয়।
১২)
বহুতল বাড়ির ছাদগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাকে
জায়গা দিয়েছে। ছোটো বড় নিয়ে দেমাক বা দীনতাকে তারা
তেমন আমল দেয় না।গ্রীষ্মের দুপুরে,শীতের রাতে কিংবা বর্ষণমুখর
বয়সে তারা গোল হয়ে বসে গল্প করে।
একেবারে নিচেরতলায় কিছু ঘটনা,নিজেদের মতো করে ঘটছিল।
উদ্বেগ, উত্তেজনা কিংবা কিসে-কী-যায়-আসে ,এরা কেউই
প্রাসঙ্গিক হতে পারে না সেখানে।মাউসের ক্লিক সব জায়গা থেকে
একইরকমের রস আনতে পারে না।
হতচকিত হওয়াকে আর তেমন পাত্তা দেয় না প্রশ্ন।সে বোঝে
মানে আর অর্থহীনতার মধ্যে কেবল শূন্যের ফারাক।বাড়ির
ছাদ বলতে তাহলে ঠিক কী বুঝায় ? বুঝিয়ে বলার লোক তেমন কেউ নেই।
১৩)
অন্ধকারে দাঁড়িয়ে তারা আলো বিষয়ক কথা বলছিল।
আলোকে নিয়ে লেখা গল্প, কবিতা, ঝলমলে একটি সন্দর্ভ
নিয়ে।কিন্তু কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিল না।আকুতি
নিজেই ছিল না, তাই তার তীব্রতার কথা কেউ ভাবেনি।
অন্ধকার সেখানে নিজেকে বিছিয়ে ছিল তিনটে সময়ে।চারটে
দেওয়াল ও একটা ছাদ তাকে গাঢ়তা দিয়েছিল।নিকষ ।
তারই পাশে আকাশ খোলা ছিল।দিনেরবেলা যে আলো
তার গায়ে লেগেছিল, তাইই চুঁইয়ে চুঁইয়ে এসে মিশছিল
অন্ধকারের সঙ্গে।সেখানে নরম স্পর্শরা দেখতে পায় পরস্পরকে।
এই দুই অন্ধকারের পাশে খানিকটা শূন্যতা ছিল।একটি জোনাকি
সেখানে কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছিল।
ঘুটঘুটে, ভয়াল, তামিস্র নামের যত ভয় ছিল, তাদের হাত থেকে
আলো-সন্ধানী মানুষগুলোকে উদ্ধার করল স্বয়ং অন্ধকার।
১৪)
নিশ্চয়তার মনে একটা ভয় কাজ করছে।পোকায় কাটলে
নতুন পোশাকের যেমন হয়।ডুবন্ত যাকিছু দেখা যায়,
অক্সিজেনের জন্য তারা কতটা উদ্গ্রীব হয়, জেটির জাহাজ
তা বোঝে না।অনিশ্চয়তা এসে নিশ্চয়তাকে চ্যালেঞ্জ
জানালে ,খুব উন্নত শহরের যানও বাড়ি পৌঁছাতে পারে না।
মেঘ, তার ভাসমান ডানায় কয়েকটি সাদা বককে নিয়ে
উড়ে যাবার সময়, ক্লেশকে জানায় সে অবান্তর।
পাণ্ডুলিপির নীরবতা জাগতিক সব সরবতাকে
নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখে,কোনো এক ম্যাজিসিয়ানকে
তার ভেল্কিই ভেল্কি দেখাচ্ছে।
এসো ভীতি, গানের গীতিরূপের মধ্যে আশ্রয় নাও,
যুদ্ধ জিতে যাবে।
১৫)
ক্লান্তি এসে কুয়াশার মতো জড়ো হলো ঘড়ির মুখের উপর।
এই অন্তহীনতার রাত্রিতে সে একা আর চলতে পারে না।যার স্মৃতি
সে সেকেন্ড দিয়ে দিয়ে গণনা করে, তার শরীর থেকে উদাসীনতার
ঘনত্ব পথ রোধ করে।স্মৃতি বুঝে পায় না তার সিম্পটম্স
সুখের না দুখের।
টেবিলের উপর ঘুমের ট্যাবলেটরা ছড়িয়ে নিদ্রাহীনতার সঙ্গে
লিপ্ত হয়ে।কয়েকটি স্বপ্নের নাট্যরূপের গায়ে অকারণে লেগে আছে
শুকনো রঙের ঘ্রাণ।যে টানেলের বিশেষণ দীর্ঘ, তার সঙ্গে সঙ্গে
এক রাস্তায় হেঁটে চলেছে উৎকন্ঠা।
যে সব শ্বাসবায়ুর ফুসফুসে সালফারের আলিঙ্গনের দৃঢ়তা
লেগে থাকে, তারা সব মরা মৌমাছির মতো উড়ছে, আকাশ কীভাবে
ক্যানভাসে আসবে তা ভাবতে ভাবতে।
১৬)
ছলাৎ করা জল বারবার তা করে।তাতে যে ধ্বনি
জন্ম নেয়, তার মধ্যে একটা গহ্বর থাকে, যাকে গর্ত বলে।
সুগন্ধি-আত্মহত্যা সেখানে আসে রিলে পদ্ধতিতে।কোনো
মানুষ যদি ভাবুক হয়,সোহাগা সোনাকে খুব আদর করে।
আদর কেমন যদি জানতে হয় - প্রাণ ভরা , পাগল করা
আর বিলিয়ে যাওয়ার ট্রেনিং জরুরি।
চাষাড়ে জমিতে মাখন লেহন করছিল চাষি। সে জমিকে যে
বোঝে, আনাড়ি বলে লোকে তাকে বাজারে পাঠায় না।
আহা চাষি, প্রেম তোমাকে ভালোবাসা শেখাতে প্রেমিক হলো।
আনপড় পণ্ডিতরা ভাবল - এ সবই জাহান্নামের উদাহরণ।
বাতাস যে মেজাজে এসে ক্লাসে বসল, কেতাবি শ্লোকে
তার উচ্চারণ ফুরফুরে।জলে, হওয়ায়, মাটিতে বড্ড বাড়াবাড়ি
করছে। তাদের ছল বড় বেশী ছলাৎ।মনের মর্জি
চিকন চিকন লাগে।
১৭)
কবিতা এ পাড়ায় আজ নিজেকে পাঠ করবে।কবি শব্দটি সেখানে
খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয়।তবু কিছু নামপদের গায়ে সেটা লাগিয়ে
দেওয়া হবে।ফুল ,চন্দন ,উত্তরীয় পাবে তারা।
আমাদের পাড়ায় কবিতা নিজে নিজে পঠিত হবে।বিস্তৃত পাড়া
আমাদের,তার আগে আমরা ব্যবহার করি সু।
আকাশ কেমন, সে সম্পর্কে ঘুড়ি কিছু বলছে না।শুধু উড়ছে।
নিচে মাটিতে দাঁড়িয়ে লাটাই বলছিল- আকাশ বিশাল, অনন্ত,
অবাধ। লাটাইরা সংখ্যায় বেশি হলে আকাশ সম্পর্কে তাদের
মতামতের সংখ্যাও বাড়ে।কেউ কেউ আকাশকে ভয়ংকর, পতনশীল
এবং গিরগিটিও বলে।মাঝে মাঝে সেমিনার বসে।শ্বেতপত্রের দাবি ওঠে।
কবে প্রথম পৃথিবীতে পোস্টম্যানের জন্ম হয়েছিল ; সৃষ্টিপূর্ব,
প্রাগৈতিহাসিক না সময়াতীত কোনো কালে, কেউ জানে না।
জানি না যে ,তাও জানি না আমরা।তাই ক্যালেন্ডার ছাপাই বছর বছর।
১৮)
মাতলামি আমাকে নিয়ে অরণ্যের দিকে গেছে।সেখানে ঢোকার
যে দরজা আছে তা তার জন্য অবারিত।তার সৌজন্যে আমিও।
খানিকটা ভেতরে ঢোকার পর একটা ফাঁকা জায়গা।তাকে খানিকটা,
কিছুটা ,এমনকি অনেকটাও বলা যায়।কিছুক্ষণের বিশ্রাম
আমার সঙ্গ নেয়।পিকনিকের ফর্দ বানিয়ে নেওয়া হয়।আর
কাছেপিঠে এক ঝর্ণা স্নান ও পানের ইচ্ছেকে তীব্রতা দিচ্ছিল।
একজায়গায় শীতের রোদ জঙ্গলের অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকেছে।
কী খুঁজব তা খুঁজতে খুঁজতে আমি সেখানে গেলে, সেই রোদ
আমাকে পান করতে থাকে।গরম হয়।গরম হলেই, কথা বলতে
শেখে ইচ্ছে।কথাকে কেউ কেউ খোলামেলা, চুপিচুপি, ধারাল,
বিভিন্ন নামে ডাকে।আমি তাকে বান্ধবী বলেছি।
গভীরতা যখন থমথম করে, ছমছম করে, কাজ ভুল করে
সব নার্ভ, তখনই হঠাত্ সেই মাতলামির জন্য সরস্বতী পুরস্কারের
গল্প ছাপা হয়।
১৯)
উৎপ্রেক্ষা উৎকৃষ্ট হলে উতরে যায় সারাৎসারের ন্যূনতা।
যে অপেক্ষা রাস্তাকে ভরে দিয়েছিল মধুতে সে আজ আবার
নিজেকে দীর্ঘ করতে রাজি হয়েছে।ভয় পাবার ভয়ে বর্ণ
পাণ্ডুর হয় না যদি নুনের প্রতি আস্থা থাকে।
কবিতা নিজেকে খুঁজে না পাবার ক্লান্তি গ্লিসারিন সাবানে
ধুয়ে সূর্যকে সুযোগ দিল তার ঔজ্জ্বল্য যাচাই করে নিতে।
রঙিন চাদর, ডানার দ্যুতি, হীরে দিয়ে তৈরি জল - এসব
থাকলেও, কবিতার অসুবিধা হলো না একগাছি চুলের উড়ে
যাওয়া ভ্রান্তিময় পথকে অভ্রান্ত করতে।
গল্পটা শেষ হওয়ার মুহূর্তেই সে এসেছিল, লক্ষ করেছিল
মায়াবী অন্যমনষ্কতা।
২০)
অন্বেষণের খুব মন খারাপ। ট্রেকিংপথের পা-হড়কানোর
সামনা করতে হচ্ছে বারবার। নিরানব্বই থেকে শূন্যের দিকে
পতনের পৌনঃপুনিক।যেসব ফার্স্টবয় আর ফার্স্টগার্লদের
চলাচলের ফলে রাস্তার রঙ সোনা হয়ে যায়, তারা এসব
গোত্তামারা,ডিগবাজিমারা প্যান্ট ফেটে যাওয়ার মর্ম কী বুঝবে!
আহা, বাছা অন্বেষণ! মনখারাপ না করে, অন্বেষণ চালিয়ে যাও।
একশো তোমার পায়ের ফাটা চামড়ায় একদিন লাগাতে আসবেই
পেট্রলিয়াম-জেল।দূরত্বের কাছে অনুমতি নিয়ে একটু তাকিয়ে দেখো -
পশ্চিমদিকের মাঠেও, শুকনো গাছেও সবুজ রঙের পেন্টিং-কর্ম
করেছে কেউ। ওহে মরণোন্মুখ,তুমি ওকে বলো,কীভাবে
লোকটাকে ছেড়ে, হার স্বীকার করেছ জীবনের কাছে।
হে হিপহিপ-হুররে ,জিন্সপ্যান্টের নকল-ফাটায় কণ্ঠ থেকে
আওয়াজ তোলো।অসভ্য,বর্বর,ইডিয়ট -এসব শব্দগুলোর
ব্যবহৃত হবার সুযোগ দাও।
২১)
নিদ্রাহীনতার মধ্যে কোনো হীনতা নেই।উদ্বেগ আছে,
উৎকন্ঠা আছে।আতঙ্কও থাকে।কমে বাড়ে সময়ে সময়ে।
একটি পদ্মের রূপ, রঙ ও স্নিগ্ধতার কাছে প্রাসঙ্গিকতা
দেখাতে পারে না অভাব ক্লিষ্ট ঘুম। তাকে কোনো এলিট
ক্লাবের টিকিট দেওয়া হয় না।এলিটয় রঙের কালিতে
সমাজ বিষয়ক প্রবন্ধ ছাপা হয় না।সমাজ স্রেফ একটি
ভুল বানানের মধ্যবিত্ত শব্দ।
রাতের যে অংশে কোনো মায়াবী ওঙ্কার ছড়িয়ে পড়ে
পাউডারের উপমায়, সেখানে কোনো প্রশ্ন তৈরি করার জন্য
ইলেকট্রন,প্রোটন, নিউট্রন পাওয়া যায় না।উত্তরের কথা এহবাহ্য।
নির্জন, নিশুতি, খাঁ-খাঁ-ময়,মৃত নক্ষত্রে ভরা আকাশ শুয়ে আছে
উপুড় হয়ে। নিদ্রাহীনতার আরোগ্য ছাপা হবে কোথায়?
২২)
পাখি চলে যাবার পরও ডানার উড়ন্ত ঘ্রাণ লেগে থাকে
শূন্যের নীলাভ শরীরে।শরীরের সেই নীলাভ সন্দেশ
তাকে ডেকেছিল।ডেকেছিল যাকে, সে কে? কে তা
নির্দিষ্ট করে বলা যায় না।
অনির্দিষ্টের দিকে যাত্রা করেছিল ঠিকানা বিষয়ক এক
ভ্রান্তি।ভ্রান্তি বিষয়ে যার বিপুল আগ্রহ, আগ্রহ নিয়ে সে
অশেষের দিকে ক্রমশ।ক্রমশ দিয়েই চিহ্নিত করা যাবতীয়
খ্রিষ্টপূর্ব, খ্রিষ্টপর সময়ের জ্যামিতিক চেহারা।
পাখি ফিরে আসার পথ যদি আবিষ্কার হয় কখনো, মেহফিলখানা
ভরে উঠবে ঝাড়লন্ঠনে।ঝাড়লন্ঠন থেকে ঝরে পড়া অন্ধকারের
পাপড়িগুলো নিয়ে তৈরি হবে গানের কথা।সেই কথার মধ্যে
পেতে রাখব তোমার আসন।
২৩)
অলীক এসে বসতে চায়, তোমার ফুলের উপর,
রঙিন প্রজাপতি।বিক্রীত হয়ে বিকৃত হয়ে গেছে
তোমার ফুল, দস্যুর দলনে।আমি সেই বিকারে
ব্লটিং হবো।যতটুকু লাবণ্য সংগ্রহ করতে পারব
ঘাসে, ফড়িং-এ, লাল পিঁপড়ের শরীরে ,চেয়ে নেব।
দেখা করে উপহার দেব তোমাকে।আমি তেমন
ভিখারী, যে তোমাকে মুগ্ধতা দান করার রসদ
দিয়ে আসবে দরজায়।বাতাসকে ম-ম করেছ বলে
সুইডেনের নোবেলপুরস্কার কমিটি একদিন তোমাকে
মমতা বলে ডাকবে।হওয়া যখন সেরকম খবরে
বৃত্ত ও বিত্তশালী হবে, অলীক তখনও ফুল খুঁজবে।
তোমার সবটুকুকেই সে ফুল বানিয়ে নেবে।সেজন্য
কেউ তাকে বোকা বলবে না।প্রকৃত বোকাদের কখনো
বোকামি থাকে না।এ তথ্য কতটা অলীক তার গবেষণা
হবে একদিন।
২৪)
আশ্চর্য একদিন একটি দৃশ্যকে বিশেষ করে তুলল।তখন
আমার মনে প্রশ্ন তার প্রাবল্য দেখাতে শুরু করল, সেই
দৃশ্যকে সে আশ্চর্য বলবে না বিশেষ ?
সুড়ঙ্গও একদিন তার পরিচয় পত্র থেকে গোপন শব্দটিকে
ছেঁটে ফেলে দিল।সেদিন থেকে গোপনের আর কোনো
গোপনীয়তা রইলো না। রঙ্গবিহীন কোনো রহস্যই আর
জনক রইলো না।ফসিল হয়ে গেল রহস্যময়ের শরীর।
ছলনার চোখমারা খেতে বেশ লাগে।ঘর করতে নয়।
ছালচামড়া ছাড়িয়ে নগ্ন করে ,হাড়ের কাঠামোতে টোকা
মেরে দেখি , পোক্ত কিনা।শক্ত না হলে, পোক্ত না হলে,
সর্বোপরি ভক্ত না হলে, আশ্চর্য কিছু বানানো সম্ভব হয় না
এই বিস্ময়বিহীন সংসারে।
উচ্চতা একদিন আর ততটা উঁচু থাকবে না, কুয়োর জলে
ছায়া যতদূর পর্যন্ত যায়।
২৫)
লুকানো কিছু প্রেম পড়ে থাকে প্রতি গ্রামে। প্রতি পাড়াতেও
শহরে নগরেও কি থাকে তুল্য কিছু? লুকানোর আড়াল
নিয়ে আমি লক্ষ করেছি, - প্লাস্টিকের সাহায্য নিয়ে অনেকেই
অনেক মূল্যবান কিছু ফেলে দেয়।
ভাঙা দেওয়াল, রাস্তার গর্ত কিংবা ব্রণর ব্যথায় অনেক
কাহিনি, যার আগে অনিবার্য শব্দটি ব্যবহার করা যায়,
চাপা পড়ে থাকে। পরমা একটি মেয়ের নাম হতেই পারে,
সুন্দরী না হলেও। আকাদেমিও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। এবং
প্লেটো যদি আজ জীবিতদের একজন হতেন, খুশি হতেন।
কাকে কেন জীবিত বলা হবে,হবে না,তার কিছু সর্বজনমান্য
ফতোয়া আছে।শিক্ষিত,অশিক্ষিত শব্দগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রেও।
আগামীকাল প্রস্ফুটিত হবে যে ফুল, সে কি এসব খবর রাখে?
কে জানে! সংবিধানকে মান্য করা একটি কর্তব্য এবং তা পবিত্র।
২৬)
অপমান এসেছিল অকারণ সহ।যেমন সে চেয়েছিল
নষ্ট করতে জলের স্বচ্ছতা, করেছিল।সমস্ত রাস্তার গায়ে
ঢ্যাড়া কেটে, চলে গিয়েছিল সেই আক্রমণ, নখের ধার
থাবায় ঢুকিয়ে।
আক্রান্ত বসে রইলো শব হয়ে।কার নিক্ষিপ্ত বাণে সে
শব্দভেদীর লক্ষ্যবস্তু হলো, কী কারণে, বুঝল না।শুধু
হু-হু, দাউ-দাউ দ্বারা পুড়ে গনগনে হলো।
ঝমঝম করে একদিন কেউ আসবে।কুলকুল করে ভরে উঠবে
কানায় কানায়।বিশ্বাসের দুর্বল হাতে ,সেই আক্রান্ত, স্বপ্নকে
অবিশ্বাস্য তকমা থেকে মুক্ত করতে চাইল।একদিন সেই
অকারণ-অপমান লজ্জা পাবে অপরিমেয়।
২৭)
অনন্ত হয়ে বসে আছে আমার জমিদারি ।তুমি তার গোমস্তা।
কর আদায় করছ এমনভাবে,যেন তা সংগৃহীত হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়।
বিতরণের গুণে সেই সম্পদ হচ্ছে মুগ্ধ,আপন বৈভবের মোক্ষ দেখে।
মধুর কাছ থেকে মধুর যে মধুরতা পেয়েছে , সে এখন
ভালোবাসার সামনে অভিবাদন করছে নতজানুকে।
ব্যাপ্তি এক ইনোসেন্ট বালক।নিজেই যে এতটা ব্যাপ্ত,জানত না।
যত ছড়িয়ে পড়ছে তত তার শৈশবের গুণ শুভ্র হয়ে উঠছে।
এই জমিদারি আমাকে বেড়াতে নিয়ে যায় সেই অনির্ণীত
গণিতের সমাধানের সারল্যে।দেখা হয় ব্যাপ্তির সঙ্গে।
ওহে আমার ভোলেভালা গোমস্তা, ওই বর্ধমান ভোলেভালার
নেশায়, তোমার গোমস্তা-তুমিকেও একটু নির্মিত হতে শেখাও।
২৮)
অনাহারও কিছু কাজ করে।কষ্ট পেতে সাহায্য করে।
নৈপুণ্য আছে ক্ষয়ের কাজে।নষ্ট করতেও পারে যথাযথ।
তবু এটুকুই সব নয়। শব নয় , জীবনের সঙ্গেই সে থাকে
আলপিনের বিদ্ধ করার ইচ্ছে নিয়ে।মাংস ছিঁড়ে খাওয়ার
যে দাঁত, তার গায়ে লেগে থাকে।অনাহার লকলক করায়
জিভকে, লালা ঝরাতে সাহায্য করে।তুমি আর খাদকের মাঝে
লছমনঝুলা।
একাকি শীতের রাত যখন রাস্তা হারিয়ে ফেলে কোনো
কসমোপলিটান শহরে, অনাহার তাকে সঙ্গ দেয় বাকর ও মনে।
আহা, আহার অনাহারের সঙ্গে এক ঘরে থাকে না কেন!
সৃষ্টির যাবতীয় নিয়ম যেখানে তৈরি হয়, কারিগর, ঢালাই করেনি,
ছাঁচও আছে বিভিন্ন মাপের।অসম্পূর্ণ শব্দটিকে সে
খুব ভালোবাসে। বৈপরীত্যের খেলা তার খুব প্রিয়।
নষ্ট ও কষ্টের কথা কাশিদাসের অমৃত সমান।
২৯)
অপমানিত ভাবছিল সে একজন মানুষ বা জড় পদার্থ
বা অবস্তুর অংশবিশেষ। যা-ই হোক, অপমান তার কোনখানে
কতটা লেগেছে দেখা চাই।ধুয়ে ফেলা চাই ।নির্মলতা তাকে
বলেছে,পাশে থাকবে নির্মল হয়ে।
অপমানিত স্বয়ং অপমানগুলোকে চিনতে চাইছিল।তাদের
স্বাদ, গন্ধ, আকার, আয়তন কেমন বুঝতে চাইছিল।
জানতে চাইছিল কেন মানুষ তাদের নিতে চায় না।যে যে
শব্দের মধ্যে অপমানের বারুদ থাকে তারাও বোঝে না
কেন তাদের নিক্ষেপ করা হয়।কেবল নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর
দেখে, কিছু যেন জ্বলে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে, ফেটে যাচ্ছে।
একটা পাথর, জানালার কাচ ভেদ করে, মাথায় লেগে,
খানিকটা লাল রঙ মেখে, ঘরের মেঝেয় পড়ল হতভম্ব হয়ে।
স্পষ্ট বুঝতে পারলাম সে ব্যথিত। ভাঙা কাচের জন্য আর আমার
ফাটা মাথার জন্য, খানিকটা কষ্ট উৎপাদন হচ্ছে তার বস্তুধর্মে।
৩০)
একটা কালো ছেলে আর একটা লাল মেয়ে পাশাপাশি দাঁড়ালে
একটা জানালা তৈরি হয়।পাঠক, প্রয়োজনে বা ইচ্ছে হলে
ছেলে মেয়ে দুটোর রঙ উল্টেও নিতে পারেন।
আমন্ত্রণের ইচ্ছে নিয়ে যে জানালা তৈরি হয়, আমন্ত্রিতদের জন্য
সবসময়। সে যে অক্সিজেন সংগ্রহে রাখে, তার পরিমাণ হয় প্রচুর।
একইরকমের অঙ্ক আমি একটা জলের ট্রাঙ্ক আর দাঁড়কাককে
কষতে দিয়ে দেখেছি, দুজনের কষার মাত্রা হুবহু এক, কমবেশি নেই।
অথচ ওদের দুজনের কথা বলতে গিয়ে সূত্রধর পরিচিত শব্দটিকে
ব্যবহার করার সুযোগ পায়নি।
একটা সাদা রঙের গাছের মাথায় সবুজ রঙের মেঘ আঁকলে ,কেউ
আর হাসাহাসি করে না এখন। হাল্কা সাদা, ধবধবে সাদা আর সরলতার
সাদারা পরস্পরকে অনুধাবন করে। অনুমিত ভাবনার রঙও কখনো কখনো।
৩১)
করাঘাত আমাকে ডাকে।কখনও মৃদু, কখনও তীব্র।
কখনও কর্কশ, কখনও রহস্যজনক।করাঘাত আমাকে
আঘাত করে।কখনও বেত্রাঘাত, কখনও পাথর ছুঁড়ে।
কখনও থার্ডডিগ্রি, কখনও সন্ত্রাসের নখে।করাঘাত
আমার রক্ত নিয়ে খেলা করে।অথচ সে আঘাতের অপেক্ষাতেই
আমি এক অন্ধকার ঘরে বসে আছি আজীবন।
গোলাপের ফুলটি হাওয়ায় দুলতে দুলতে পাশের একটি
শুকনো গাছের গুঁড়িতে গিয়ে তার হাল্কা স্পর্শকে আরও
হাল্কা করে।সেই অতি হাল্কা স্পর্শ শুকনো গুঁড়িটির ভেতর
পর্যন্ত ঢুকে যায়। সবুজ রঙের যাবতীয় রকমগুলো ফুটে
ওঠে , প্রায় যে মৃত ,তার গায়ে।
কলিংবেলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্নিগ্ধতা।এ কার হাতের স্পর্শ!
এসো হে করাঘাত, স্নান করো।গোলাপজল তৈরি আছে বহুকাল।
৩২)
ধারণা তার মূলে বদ্ধ থাকছে না।প্রতিমুহূর্তে সরে সরে যাচ্ছে।
সে নিজেকে আর নিজের ইচ্ছায় ধরতে পারছে না।যেমন,
না যদি তার কাছে আসতে চায়, সে হ্যাঁ বলতে পারে না।এমনকি
না-ও না।কোনো কোনো অবস্থাকে লোকে সসেমিরা বলে।
ধারণা সেটা মালুম করতে না পেরেও, ঘাড়-নড়া পুতুলের মতো
কখনও হ্যাঁ-এর দিকে ,কখনও না-এর দিকে মাথাকে
নড়তে দিতে বাধ্য হয়।
দাঁড়াবার মতো জায়গা আমি পাইনি।শূন্যের উপর গোড়ালিতে
ভর দিয়ে শূন্যে শূন্যে ভেসে বেড়াই।গণিতে শূন্যের একটা ছোটো
বৃত্ত আছে, শূন্যের আসল রাজত্বে তা নেই।মহাশূন্য, নিঃসীম বা
কসমসে যে অনন্ত থাকে, সে এসব জানে ভালোমতো।
মানুষ তো ভ্রান্তির চূড়ান্তপনায় পা ফেলে।শূন্যের কাছ থেকে তার
অনস্তিত্বও কেড়ে নিতে চায়।তখন কিছু কিছু ভূখণ্ড বিদ্রোহ করে।
শূন্যেরই পায়ের তলায় এসে আশ্রয় নেয়।
৩৩)
সবুজ ছিলাম একসময়।গায়ের রঙ ছিল সবুজ।মাথার চুলও।
চোখের মণি সবুজ।তার দৃষ্টি ছিল সবুজ।হাতের স্পর্শ সবুজতর।
তখন কেউ বসতে দিত না। কোনো সবুজকে নাকি বসতে নেই।
মানায় না। যারা সাদা ,যারা বিবর্ণ, যাদের চোখের দৃষ্টি প্রায়
নিভে এসেছে, আপেল বাগান ছিল তাদের জন্যই নির্দিষ্ট।আমাদের,
সবুজ মেরুদণ্ডদের ডাক পড়ত কেবল ব্লাডব্যাঙ্কে ।
ফুরিয়ে আসা ব্যাটারিগুলো তাদের সামান্য শক্তির সামর্থ্যেই
ঘড়িকে টেনে নিয়ে এলো আরও বহুদূর। পা টেনে টেনে আসতে গিয়ে
ঘড়ি তখন প্রায় বিকল, কচ্ছপ। সময়ের দংশনে খরগোশদের ব্যাটারিও
কমে এসেছে।বাজারে আরও বহুরকমের প্রতিযোগীও চলে এল।
নতুন নতুন অনেক রঙেরও আবিষ্কার হলো ল্যাবরেটরিতে।
সংবিধানও পাল্টে গেছে অনেক।সবুজ ফুরিয়ে আসা শুভ্রতাহীন
সাদায় আক্রান্ত এখন আমরাও।এ বয়সে আপেল খাওয়া ঠিক নয়,
ডাক্তারদের নতুন নিদান। বসার আসন দাবি করি না যদিও।
৩৪)
গভীর হচ্ছিল ঘুম।গভীরতা তার আন্দাজ পাচ্ছিল না।কেবল
তলিয়ে যাচ্ছিল যখন,বিপন্ন হচ্ছিল তল।যে তলকে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে
জ্ঞানের বাক্য শুনিয়ে।ভেসে ওঠার বাসনা তার বহুদিনের। তল উপরে
থাকলে লোকে যে তুচ্ছ করে, অবজ্ঞা করে, তা সে বুঝবে কেমন করে!
টাটকা শব্দটি ভেসে আসছে মাছ বিক্রেতার ফেরি থেকে।লোকাল
শব্দটিও ব্যবহৃত হয়,লোকের কানের শ্রুতি পরীক্ষা করতে ।একসময়
যেমন বিলাতি শব্দটির জন্য কদর ও সমীহ ছিল বেশি।
জাগ্রত পৃথিবীতে জ্ঞানের অভাব না থাকলেও, ঘুম নেই বিন্দুমাত্র।
তল বা অতল দৃষ্ট হয় না কোনো পদার্থেই।শীতের সময় যেসব
গাঁদাকে ইনকা বলা হয়, তারা সাধারণদের আসনে বসে না।
একটি গভীর ওঙ্কার,আরও কিছুটা গভীরতা সংগ্রহ করে, তলিয়ে
যেতে যেতে ,উপরের দিকে উঠে এল। তখন কিংকর্তব্যবধির কান।
৩৫)
টুকরো, ধারালো ও তীক্ষ্ণ হয়ে পড়েছিল পাথর।যা তোমার
ইচ্ছে হয়, ওকে বলো।কঠিন বলো,নির্মম বলো, পাষাণ বলো,
কানে যায় আসে না কিছু।আঘাত করার আকাঙ্খা নিয়ে উপেক্ষা
ও অপমানকে লেহন করে।নিজের জিভের আদর দিয়ে ইতরের মতো
ঢেকে নেয় সব ক্ষতস্থান।
সূর্য, থেকে এবং না থেকে, তাকে উষ্ণতা দেয় ধনাত্মক ও
ঋণাত্মক।রাত্রি তাকে গ্রাহ্য ও অগ্রাহ্য করে তোলে কর্নিয়ায়।
জল তার ছোঁয়া পেলে নৃত্যে মেটে ওঠে।কথা বলে।রঙের শরীরে
করে মাত্রা বৃদ্ধি।
পাখিরা আকাশ চেনে।তার ব্যাপ্তি চেনে।জানে অসীমের সঙ্গে
তার পরিচয় আছে।ডানারা তবু মাঝে মাঝে বিশ্রাম চায়।আকরের
তৃষ্ণা বাড়ে।পাথরের আমন্ত্রণে তাই সাড়া দিয়ে, মাঝে মাঝে এসে বসে
একা ও সদলে।পাথর পাখির কাছে আকাশের গল্পগাছা শোনে।
৩৬)
রাস্তাটির অসুস্থতা প্রকট হয়েছে।ডাক্তারের অভিমতে
রাস্তার মোড়ে মোড়ে অপেক্ষার মাধুর্য কমে গেছে।ফলে
তরল প্রেমের স্বাভাবিক সংবহন বাধা পাচ্ছে।যন্ত্রণা,
উচাটন এবং উৎকন্ঠার নির্দিষ্ট ডোজ শরীরে প্রয়োগ
করা চাই।তাতে, মনে যে বিতৃষ্ণা বেড়ে গেছে, তা কমে গিয়ে
শরীরে তৃষ্ণার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
দূরপাল্লার ট্রেন, যেভাবে দেখা করতে আসত স্টেশনের সঙ্গে,
আসবে আবার।স্টেশনের অপেক্ষা অনন্ত।সে মাধুর্যে দিনরাতের
আলোর ভোল্টেজ থাকে সমান সমান।যাত্রীরা তা টের পায়
আপন মাটির ছোঁয়া পেলে।ঠিকানা সুদূর হোক অথবা কাছের,
দূরত্ব থাকে না কিছু, অপেক্ষার মাধুর্য যদি সর্বত্র ছড়ানো থাকে।
প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে প্রেমিক রয়েছে রাস্তায়।অপেক্ষাকে
দীর্ঘতম করাই উদ্দেশ্য।
৩৭)
নদী তার পাড়ে এসে বসেছিল উদাসীন। স্রোত যেন
বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তার থেকে।সে একাকি বয়ে চলেছিল
বিষণ্ণতা নিয়ে।পাড়ে একটি সাদা বক ছিল।যাকে আর
সাদা বলে চেনা যায় না ইদানিং।প্রায় সমস্ত পালক
উঠে গেছে।সামান্য শরীরের অসামান্য লাল অভিমান
সূর্যের রোদে জ্বলছিল।
পাঁকের অন্তর থেকে উঠে আসা কোকোনদ এখানে কীভাবে
এলো, কেন এলো, প্রশ্নের প্রয়োজন নেই।মাছরাঙা,
পানকৌড়ি,গাঙচিল জানে নদী কার পথ চেয়ে গন্তব্য ভুলেছে।
উদাসীনতার যত অর্থ আছে মুদ্রিত শব্দকোষে, তার চেও
ভিন্ন অর্থে বিপন্ন নদীর হাহাকার।জলজরা জানে,
জলতল জানে, জলের গভীরে থাকা কাহিনিরা জানে -
নদী কেন পাড়ে এসে, সাদা বকটির পাশে, বসেছে একাকি।
৩৮)
শব্দটি আভিধানিক হলে পণ্ডিতের বলে দেওয়া পরিচয়
বহন করাও তুমিও।বহুকাল ধরে হয়ে আসছে এমন। যদি
সে অরফ্যান হয়, তোমার কাব্যের প্রয়োজনে,নেবে কী নেবে না
সিদ্ধান্ত নাও। ব্যবহৃত পথ ছেড়ে তুমি অন্বেষণের হাত
ধরেছ কখনও? দুর্গম ও অগম্য স্থানে অনেক শব্দরা থাকে,
বসবাস করে, অসভ্য মানুষের সভ্যতায়।
কাহিনি নতুন হতে চায়।কাহিনি উজ্জ্বল হতে চায়।
কাহিনির চরাচরে আলোকে দেখায় পথ আলো ধরে ধরে।
স্পর্ধিত শব্দটি দেখো ডাকাবুকো ভঙ্গিতে তোমার দরজায়
কড়া নাড়ছে।বসতে চাইছে ঘরে।বলতে চাইছে নিজস্ব
গোড়ালির কথা।অভিমানি উপবীতটি কী করবে, রাখবে
না ফেলে দেবে, ভেবে দেখো।
৩৯)
দৈর্ঘ্য মাপিনি ফুট বা মিটারে।গ্রাম, কিলোগ্রাম পারেনি
ওজন নির্ণয় করতে।মেপে মেপে দেখিনি আলনা, রেডিয়াস
বা টিবিয়া, ফেবুলা।কার কার নাম তোমার উপমা হিসাবে
ব্যবহার করা হয়, বলতে পারিনি।নখের খাঁজে কত নোংরা
চোখের কোণে কত পিচুটি,খুঁজিনি।আত্মাকে খুঁজেছি কেবল।
ভালোবাসা দিয়ে, লাঞ্ছনা দিয়ে, কামনা দিয়ে, উপেক্ষা দিয়ে
তৈরি করা হয় যে বিশেষ সন্দেশ, - সে-ই তোমার অমেয় আত্মা।
পরীক্ষায় বসার আমন্ত্রণ জানিও না।আগাম ফেল করিয়ে দাও।
নীল বেদনা, লাল ক্ষত, ধূসর সম্পর্ক, -যা কেউ নিতে চায় না,
গার্বেজের ভ্যাটে ফেলে দিও।আমি কুড়িয়ে নেব সানন্দে।
খৃষ্টপূর্ব দু'হাজার বাইশে যেখানে ছিলাম, এখনও সেখানেই আছি,
পাথর।ভালোবাসা আমাকে যে মানুষের স্ট্যাচু বানিয়েছে তাকে ছেড়ে
এগোতে পারিনি।অনীহা সেজন্য দায়ী এবং সে আমার প্রিয়।
৪০)
আঠালো ঘুম যখন আমার শরীরে পাইথন, বুড়ো আঙ্গুল,
তর্জনী ও মধ্যমার ফাঁক থেকে কলম খসে পড়ে গেছে।
কনিষ্ঠা ও অনামিকা তা নির্বিকার তাকিয়ে দেখেছে।অসহায়
কলম মুখ থুবড়ে পড়েছে, তার বল ভেঙে গেছে।ভেতরের
অক্ষর, শব্দ, বাক্য বোবা হয়ে গেছে।
পাশের বাড়ির ছাদে, পাশের বাড়ির ছাদে, পাশের বাড়ির ছাদে
প্রতিটি ছাদে তুমি দাঁড়িয়েছিলে, শীতের রোদ থেকে পেড়ে নেওয়া
কমলালেবু হাতে।তবু বরফের মতো ঠাণ্ডা আগুনে পুড়ে যেতে
হয়েছিল আমাকে।লোকে আমাকে বলত অকর্মণ্য, অপদার্থ ,রাবিশ।
রোদময় কোনো মাঠের সবুজে ঘুমের চাদর মেলে দেখো
আমার বুকের কথা প্রিন্ট হয়ে গেছে।লোকে যাকে কবিতা বলে।
ধুনুরীর সাহায্য নিয়ে মোটা মোটা ভাষণ তৈরি করে কেউ কেউ।
৪১)
নিপীড়নের ভালোবাসায় আছি, নিপীড়িত নই।একা একা
দেখেছি অদূর থেকে, দল বেঁধে অনেক মানুষ, খুন করছে ভালোবাসা।
উন্মত্ত জনতা মৌচাকে ফিরে গেলে আমি ফের একা একা
নিহত প্রেমের কাছে যাই।ফুঁ দিয়ে তার শ্বাস চালু করি।
যে লোকটা চায় বলে মৃত বৃক্ষ বেঁচে উঠতে পারে, লিখতে পারে
নতুন কবিতা, নিপীড়িত বলে তাকে করুণা করার সাহস
কে দেখাতে পারে ?
নির্জনতাকে ডেকে আনি একদিন।নাম দিই নির্জন। রাখি
বাড়িটির পাশে বন্ধু করে।দুটো পায়রা আসে মাঝে মাঝে
ইদানিং।একটির রঙ মুসুরডালের খোসা, অন্যটির সাদা।
সত্যই সাদা।সাদা গোলাপের শুভ্রতা ঘাটতির অভাব বোধ
যাকে দেখে।
শীত শেষ হয়ে গেলে নির্বাক ক্যালেন্ডার থেকে একদিন
উল্লসিত হয়ে ওঠে উল্লাস নিজে।বসন্তের ইশারা তার রোমকূপে
কাঁটার মতন জেগে ওঠে, স্বপ্নের গল্পগাছা নিয়ে।
৪২)
নগ্ন কবিতাটি, যখন যেভাবে আসে, প্রতিদিন প্রতিক্ষণে
লিখে রাখি আমি।কখন যে ঘড়ি বন্ধ হয়ে যাবে!ব্যাটারি
ফুরিয়ে যাবে, কলকব্জা নষ্ট হয়ে যাবে, ভয়ে থাকি।তবে
কখনই ভয়ার্ত হতে দিই না ভয়কে।শুনি তার কথা মন দিয়ে,
লিখে রাখি।যে কবিতাটি অন্তিম অভিধা পেতে চায়, সেও যেন
শব্দ-সাজে সেজে উঠতে পারে।
বক নিয়ে কত লোক, কত ভাবে, কবিতা লিখেছে পৃথিবীতে
সে তথ্যের সন্ধান করি না।প্রতিটি বকের অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন।
প্রেমে আর বকে কতদিন কতভাবে দেখা হয়েছিল, নদীহীন
শহরের পাঁজরে পাঁজরে, লিখে রাখি।অর্থ কিছু না হলে, না হোক।
সকালে নতুন ট্রেন এলো।নতুন নতুন যাত্রী এলো, নতুন পোশাকে।
কবিতাও ট্রেনে ওঠে, গরম চায়ের কেতলি নিয়ে।পরের স্টেশনে গিয়ে
টিকিটচেকার হয় ,পানীয়জলের কল হয়।
৪৩)
রামধনু-পরীটি এখন মাঠে নেমেছে।আমার চোখের সামনে
একটি দূরবীন জায়গা নিয়েছে।সে তার কাজ করছে। আমি
দেখছি, তার বর্ণালী মাঠের চারদিকে, প্রভার বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে।
মাঠ-ঘাটের তাই এখন একটু রাজা-রাজা ভাব।সবুজের
সবুজ ভাব একটু বেশি।অতিরিক্ত তরল হয়েছে জল।পরীর
অদৃশ্য ডানা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে, কারণ দূর থেকে তাকে
দেখতে দেখতে দূরবীনের নেশা জমেছে তুঙ্গে।
ছোটো বড় গল্পের দল আঁকাবাঁকা আলপথ ধরে হাঁটছে
সেই সেলিব্রিটি-পরীকে দেখতে।তাদের দূরবীন নেই।কাছ থেকে
তারা দেখে সব।পরীর গায়ের রঙ, পরীর পায়ের রঙ ,পরীর
চোখের রঙ যত পড়ে স্তূপাকার, সেই নিরন্ন-মাঠে।প্রজাপতি,
যারা ডিম পাড়বে,- রহস্য,যারা ফুল ফুটাবে, - সব দেখবে
তারা, কাছ থেকে।
তাঁতের মাকুর কাজ বেড়ে গেছে।মাকড়সাকে বুনন শেখাচ্ছে।
বলছে,- যত দূরে থাকো , দূরবীন থাক বা না-থাক, বুনন
নিখুঁত হওয়া চাই।
৪৪)
ম্যাক্সিবতী মেয়েরা ঝুলছে।আমি তাদের নাগাল পাই না।
হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, সালফার, ফসফরাস, আয়রন-আদি
দিয়ে তৈরি মেয়েরা ঝুলা বলে একটি ক্রিয়াপদ সৃষ্টি করেছে।
রাতে এই মেয়েদেরই শরীর থেকে নেমে, নাইটিরা যখন শুতে যায়,
চিত্রশিল্পীরা তখন ঝুলে থাকার ছবি আঁকে।
বয়স আমার শরীরে এসে বৃদ্ধ হয়েছে।কোমরে ব্যথা,
হাঁটুতে ব্যথা।অবাঙ্ সমস্ত কথা ফোঁড়ার কাছ থেকে ব্যথা ধার নিয়ে
টাটিয়েছে। সৃষ্টির নিয়মমতো যে কনডেন্সড শক্তি আমাকে
দেওয়া হয়েছিল, বড় নচ্ছার, ঝুলন্ত কিছু দেখতে নেই, বোঝে না।
স্বপ্নরা এখনও দুষ্টুমি ছাড়েনি।খোসা ছাড়িয়ে আম খেতে নেই
সুগারের রোগীদের, মানতে চায় না।
৪৫)
অনিশ্চিত-কেউ-একজন একদিন নিশ্চিত-একজন হবে, - এরকম
আশা রাখি।হাজার কবরের নিচ থেকে জীবিত কবরটিকে আবিষ্কার
করবে।সেদিন সবাই জেনে যাবে, যারা পুড়ে গেছে, মাটিতে চাপা
পড়েছে,নদীতে ভেসে গেছে, তারা সকলেই মৃত নয়।জীবিত
উপাধিধারী কিছু মৃত-মানুষের কৃতকর্ম প্রকাশিত হবে।
বাংলা কবিতার নাড়িতে একদিন অনেক কবির পাল্স্ খুঁজে পাওয়া
যাবে।ভূস্তরের প্লেটে প্লেটে,পলিতে পলিতে, সময়ের খাঁজে খাঁজে
একদিন যারা অক্ষরের মর্যাদা রক্ষা করে গেছে।মিথের ভুবন নিয়ে,
ঋণভারে জর্জরিত তথ্যরাশি নিয়ে, যান্ত্রিক কপি-পেস্ট নিয়ে যারা
কোনোদিন উচ্চকিত হয়নি কখনও।বলেনি - আমার ঢাক
শোনো, বাজে ভালো।
সবল পেশিতে থাকে জড় শক্তি, অক্ষর থাকে না।রক্তচক্ষু
উৎপাদন করে ভয়।শব্দকে পারে না করতে মধুর বা ধারাল।
৪৬)
অসমাপ্ত কিছু ঘটনার সচল ছবি, একজন ঘুমন্ত মানুষের
চোখের সামনে নীরবে কথা বলছে।কিছু নাটকের দৃশ্য যেন
নিজেদের ভিডিওগুলো চালু করে, অথচ ভলিউম মিউট করা থাকে।
অনেক সময় এক কথাকেই একাধিকবার বলার দরকার পড়ে।
সেরকমই যেন পুনরাবৃত্তি হয় অপ্রয়োজনীয় কিছু অর্থহীনতার ।
অকস্মাৎ কিছু গান যেরকম অনিবার্যতা নিয়ে বেজে ওঠে
নির্জন প্রান্তরে নিজে নিজে।কে শুনবে, কে তাতে মুগ্ধ হবে,
কে ধরবে সরগমের ভুল, - এসব ভাবার সিস্টেম থাকে না
সেই কর্তাহীন ক্রিয়ার পিছনে।
একদল ঘটমান ইতিহাস, যেন তারা চিরকেলে, যেন
আগামীমুহূর্তে ফের ঘটতে চলেছে।অথবা সে দৃশ্যেদের
যেটুকু ঘটনাকাল থাকে, কালের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।
৪৭)
অতিরিক্ত রিক্ততা নিয়ে সময় চেহারা নিচ্ছে অসময়ের।এই
আয়োজিত অন্ধকারে আলোর মাত্রা বড় বেশি।কর্নিয়া নষ্ট হয়।
নিরুপায় বস্তুদের মধ্য থেকে যাকিছু চিত্রায়িত হয়, তাদের
বাস্তবতার ধন্ধে ক্লিশে মেধার অনিবার্য স্তূপাকার।এসো, ভাব,
অভাবের রসদ থেকে খনিকে সোনায় ভরে দিই।
দরজার মস্তিষ্কে তখন একটা দৃশ্য তৈরি হচ্ছে, তারই দরজা
থেকে ফিরে যাচ্ছে ভিখারী।যত সে দূরে যাচ্ছে, প্রাপ্তিতে সে
ততই ধনবান।হে রিক্ত সরস্বতী, যা কিছু প্রার্থনা আছে
ভিখারীর কাছে চেয়ে নাও এই বেলা।
অনন্য-হৃদয় যাকে খোঁজে ,সে তেমন অসামান্য নয়, যাকে
সহজেই, নির্বিচারে, অনাদরে সামান্য বলা যায়।
৪৮)
মা কালীর সাধক ছেলেরা তার দেখা পেয়েছিলেন, একজাতীয় ইতিহাস
এমন কথা বলে।আমি কিন্তু সাধনাকে কালীর খোঁজে পাঠাইনি।
বরং উৎ-ইন্দ্রিয় থাকি সময়ের ইলেকট্রন, প্রোটোন কণায় - কালী
কবে আমার সাধনায় মগ্ন হবে।
ভাঙা ইট ,এক কোদাল মাটি, দূষিত জলের বন্ধ হয়ে আসা শ্বাস
আমাকে চেনে।তারা জানে সোনা ও ছাইয়ের মাঝে সমানচিহ্ন
বসানোই প্রকৃত অঙ্ক।যে অঙ্কে ভুল নেই, সত্য থেকে সে অনেক দূরে।
আমাকে যে পেতে চাও, তা প্রকাশ করো হে সাধনযোগ্য ভাব।
যে বিমূর্তজীবন তোমার সম্পদ, তার কোনো মূল্য নির্ধারণ হবে না,
যদি তুমি আমার স্বাদ না পাও ।
মলের প্রতিটি কণা জানে ,যে-আমি নির্মল, তার সঙ্গে কোথাও
অভেদ হয় তারা সকলেই।
৪৯)
উষ্ণতার বুকের নিচে শয়ন আমার শয্যা পেতেছিল।ঘুম
এসেছিল দেখা করতে, সঙ্গে কিছু বাছা বাছা স্বপ্ন নিয়ে।সময়ের
অতিসামান্য অংশকে আহার্যে পরিণত করার পর সে চলে গেল।
রেখে গেল সেই স্বপ্নগুলো।
ঠিকানা বিষয়ক একটি বই, একটি মাত্র প্রিন্ট, অক্সফোর্ড থেকে
ছাপা হলো।সেখান থেকে তোমার ঠিকানা খুঁজে নেয় আমার হদিস।
তারা দুজনে তারপর, সামান্য পৃথিবীকে গুজবে পরিণত করল,
যা দিয়ে নতুন করে গল্প লেখা যায়।
মহা শব্দটির ব্যবহার ইদানিং খুব বেড়ে গেছে।জীবন, কাল ,
সমুদ্র, আকাশ - এসব ছেড়ে সে এখন কণা, শূন্য, লীনের সঙ্গেও রয়েছে।
খোঁজ কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়েছে।আমার কাছে বুঝে নিতে চাইছে
তার কাজ।আমি খোঁজের অযৌন জন্মদাতা।
৫০)
ঘুমে আর জাগরণে মুখোমুখি।কেউ কাউকে সমীহ করছে না।কেউ
বলছে না - চলো, তোমার বাগান দেখে আসি।ত্রিপলকে আচ্ছাদন
হবার অর্ডার করেছে, একে অন্যের মাথার উপর।কেউ কাউকে
একজোড়া পা দিতে চাইছে না, একজোড়া ডানা।অথচ স্বপ্ন
এদের দুজনকেই দেখতে শিখিয়েছে।
সাইবেরিয়ার মাঠ, সাহারার মরু, মহাসাগরের প্রশান্ত অংশটুকু
জেগে থাকতে চায়। ঘুমাতেও চায়।দুঃসাহসের একটা নেশা আছে
বিপদকে সম্পদে পরিণত করতে চাওয়ার।সেখানে নেগেটিভ
পজেটিভের সম্মান একই।উপেক্ষাও এক।
গভীরতা ঘুমের সঙ্গ ছেড়ে জাগরণের সঙ্গে থাকতে চাইলে শঙ্কা
আর ততটা শঙ্কিত হয় না।তারা জানে, এটা স্রেফ একটা গেম।
জয় পরাজয়ের ভাগ দুজনকেই দেওয়া হবে সমান সমান।
৫১)
ছায়ায় থাকতে থাকতে ক্লোরোফিল শূন্য হয়ে গেছে। তাই
আলোর সন্ধানে বাইরে আসে।আলোতে শিশুর হাসি, আরোগ্যের সুখ,
কাঙ্খিতের উষ্ণতা খোঁজে।বাইরে এক ভীষণ কালোছাতা হয়েছে
ব্রহ্মাণ্ড। যেন এই অনন্ত এক সামান্য কুচফল ।
বরফ জমানো হাড়ের ঘনত্ব যদি সত্যই কমে ,যে উষ্ণতা প্রয়োজন
মিলবে কীভাবে? আগুনের গায়ে জ্বলন্ত দেশলাইকাঠি ধরে,
আগুন জ্বলে ওঠে।বাতাসেরও আগুন-তৃষ্ণা আকণ্ঠ।চেটেপুটে নেয়।
ঠাণ্ডা হয়ে যায় আগুন।
বিন্দু বড় সিন্ধুকে গ্রাস করে নেয়।সিন্ধু তার জঠরে গিয়ে
বিস্মৃতির উঠোনে এককোণে ,হাত-পা গুটিয়ে চুপ-খরগোশ। বসে থাকে।
হে ছাড়খার-শিল্পী হুতাশন, শক্তি সংগ্রহের জন্য নতুন কোনো খেলাকে
বিস্ময়কর করে তোলো।রহস্য আর একবার জন্ম দিক নিজেকে।
৫২)
বিবর্ণ একদিন সাদা হলো।সাদা একদিন বিবর্ণ।এভাবে
বর্ণের সংসারে ছবিরা গড়হাজির হলো।এইসব ক্লাসছুট ছবিরা
ক্লাসের অনেক গোপনকথা বনে-জঙ্গলের নির্জনতায় রাষ্ট্র করে দিল।
যেসব উদ্যোগ উপক্রমণিকার গুরুভার উপদেশ না মেনে
বিপর্যয়ের উপক্রম করল, তারা রাষ্ট্রবিরোধী হলো সহজে।
সহজকে সহজে মেনে না নেওয়া এক পরম্পরা।তাই কেউ যদি
মেঘার্ত আকাশের কথা না ভেবে কেবল একটি জলফড়িং-এর সঙ্গে
ছায়ার বাক্যালাপ নিয়ে মৌন থাকে, সেটা নিশ্চিতভাবেই
পাগলামো বিষয়ক প্রবন্ধের উদাহরণ।
সাদা এবং বিবর্ণ একটি মানুষ, এখনই টুকরো টুকরো ক্যানভাস
কেটে আনছে আকাশের অর্থহীনতা থেকে।দূরবর্তী কোনো
গিরিশৃঙ্গ থেকে অজ্ঞাতবাস-ছবিরা লক্ষ রাখছে।সময়ের সঙ্গে
কথা হয়েছে তাদের, তারা আসবেই যাবতীয় রঙ সঙ্গে নিয়ে।
৫৩)
আমার অনন্ত জীবন ইদানিং অন্তের সঙ্গে বৈঠক করছে।তাদের
মধ্যে আলোচিত হবার সুযোগ পাচ্ছে- কোন কোন অনিশ্চয়তার
স্তম্ভ তার সন্দিগ্ধতাকে প্রাসঙ্গিকতা দিচ্ছে।কথা ছিল ,রেখাটি
সরল হোক বা জটিল,চলতে থাকবে।নতুন সংশোধনী আনার জন্য
হয়তো বুঝাতে চাইছে অনন্তকে,তারই অনুপস্থিতিময় অন্ত।
একটি প্রজাপতি কাল এখানে উড়েছিল।তার মূর্ত ডানায় কিছু
অমূর্ততা ছিল।তারই মনোরঞ্জনের প্রয়োজনে ফুলের বাগান
সেখানে স্থাপিত হয়েছিল।আজ সে সম্পর্কে পরবর্তী কিস্তিটি দিতেই হবে ,
এমন নির্দেশ ছিল না সম্পাদকের।সম্পাদিত হবার জন্য যেকেউ
হাজিরা দিতে পারে।
অন্ত ও অনন্তের টেবিল নিরীক্ষণ করে দেখা গেল, তাদের
নিঃশ্বাস বায়ুতে কিছু ষড় রয়েছে।বশ্যতা হয়তো অনন্তকে শীঘ্রই
বগলস পরাবে।আমি উদাসীনতাকে সক্রিয় হতে বলি।
৫৪)
অনিবার্য ঘটনাগুলো তাদের অভিসন্ধিহীন অনিবার্যতা নিয়ে
সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে দুয়ারে।ঘটমান হবার আগে পর্যন্ত
তারা থাকে অবয়বহীন।পুরাঘটিত হয়ে গেলেও তারা অবয়বে
থাকতে পারে না।কাঁটা এবং ফুল, একসঙ্গে বর্তমান রয়েছে
গোলাপের সবিনয় অহংকারে।
একটু আগেই এখানে বজ্রপাত হয়েছে।আহত মাটির বুকে
রক্তের কালো ছোপ লেগে আছে প্রামাণ্য স্বরূপ।যদিও ঘটনা
প্রমাণের দায় স্বীকার করে না নিজে।সতর্কতার ভাষা সরল করেনি,
যাতে সাধারণের অনুভূত হতে পারে।নিকট অতীতে একদিন সেখানে
পুষ্পবৃষ্টি সত্যের সমার্থক ছিল।কিছু কথা শিলাস্তর লিখে রাখে
নিজের খেয়ালে।খেয়ালি মানুষ যারা ,তারা পড়তে পারে।
যে বিপুল পরিমাণ ঘৃণা তুমি জমিয়ে রেখেছ, ভবিষ্যতে আদৌ তা
থাকবে কিনা, ঘৃণাও জানে না।যেসব ক্রমিক সংখ্যা গণিতকে
সাহায্য করে গণনার কাজে, নিজেদের উপরে তারা ভরসাশীল নয়।
৫৫)
ভাণ্ডারের অফুরন্ত সানাই কি ফুরিয়ে যাবে ? বিষাদও হারাবে
তার মৃদু স্নিগ্ধতা,মোলায়েম কষ্টের মিড়?এইযে চতুর্দিকে সন্ত্রাসে
ভাইরাস-ভাইরাস সন্দিগ্ধ খেলা, এর কবে শেষ হবে? নাকি এর
অনন্ত মহিমা কেড়ে নেবে আমাদের প্রেমে ভেজা বীজানুনাশক ?
একদা একদিন,যে নদী জীবিত ছিল,তারই কয়েকটি ঢেউ আজও
লেগে আছে তীরে।যা থেকে এখনও আমার অক্সিজেন-লেবেল মান্য থাকে।
নির্দয় ডাস্টার, তুমি অতিমান্য, মহামান্য কিছুই থাকবে না।আমার
জীবন-স্পৃহা একদিন তোমার ক্ষয়ের কারণ হবে।
বিজয়ের উষ্ণীষ শির পরিবর্তন করে বারবার।স্মরণ কখনও যদি
বিস্মৃতির ক্রীতদাস হয়ে শিক্ষাকে জীবন থেকে মুছে ফেলতে চায়,
অশিক্ষাই তখন এক ভীষণ শিক্ষা হয়ে সর্বনাশকে মৃত্যুদণ্ড দেবে।
- Get link
- X
- Other Apps